মাসুদুর রহমান, গোপালগঞ্জ : জলজ ফুলের রানী বলা হয় পদ্ম ফুলকে । প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া এই পদ্ম ফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে বিলগুলোকে। নানা রংয়ের পদ্মফুল এমনভাবে ফুটে উঠে, যেন কেউ স্বপ্নের সুন্দর বিছানা পেতে রেখেছে। যেদিকে দুচোখ যায় শুধু নানা রংয়ের ফুল আর ফুল। এমনই চিত্র দেখা যায় গোপালগঞ্জের পদ্মবিলে। পদ্মবিল নামে বিলটি সবার মুখে মুখে প্রকাশ পেলেও বিলটির আসল নাম গোপালগঞ্জের বলাইকর বিল।
পদ্মফুল সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে গোপালগঞ্জের ঐ বিলের চিত্র । প্রতিদিনই হাজার হাজার ভ্রমন পিপাসুরা এই বিলে আসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে ।অন্যদিকে, বর্ষাকালে কোনো প্রকার কাজকর্ম না থাকায় পদ্মবিল থেকে ফুল সংগ্রহ করে হাট-বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় দরিদ্র মানুষ । তাছাড়া পদ্মবিলে দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুড়িয়ে কামিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। এসব মাঝিরা সকাল থেকেই ঘাটে নৌকা ভিরিয়ে বসে থাকেন দর্শনার্থীদের ঘুরানোর জন্য। প্রতিদিন তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভ্রমন পিপাসুদের নৌকায় ঘুরিয়ে কয়েক হাজার টাকা আয় করে। এতে ভালভাবেই সংসার চলে যায় এসব মাঝিদের। বর্ষাকাল শেষ হয়ে বলাইকর বিলে পানি কমে গেলে চাষিরা বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন শুরু করেন। এখানে ভাল ফসল জন্মায় বলে জানিয়েছেন এখানকার কৃষকেরা। সব মিলিয়ে বিলজুড়ে মানুষের উপকারের শেষ নেই ।
গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য বিল রয়েছে । তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জেলা সদর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বলাকইড় বিল। গোপালগঞ্জে ১৯৮৮ সালের পর থেকে বর্ষাকালে প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই । আর এ কারণে এখন এ বিলটি পদ্মবিল নামেই পরিচিত ।
প্রতিদিনই এ বিলে দর্শনার্থীরা পদ্মফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমাচ্ছেন । আবার অনেকেই পদ্ম ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ।
এ বিলের চারিদিকে বর্ষা মৌসুমে শুধু পদ্ম আর পদ্ম । বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোলাপি আর সাদা রং এর পদ্ম দেখলে মন ও জুড়িয়ে যায় । চোখ যত দূরে যায় শুধু পদ্ম আর পদ্ম। ৬৪টি পাপড়ি মেলে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বাগত জানায় এ ফুলেরা । এমন অপরূপ দৃশ্য যেন ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বর্ষা মৌসুমে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের কোন কাজ থাকে না । তাই শুধু সৌন্দর্যই নয় এসময় শত শত পরিবার এ বিলে জন্ম নেয়া পদ্ম ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন । সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজায় পদ্ম ফুলের চাহিদা থাকায় ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত বিল থেকে ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে । বিল এলাকায় এর মূল্য কম থাকলেও শহরে এক একটি ফুল ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে । এতে দৈনিক ৫ থেকে ৬’শ টাকা উপার্জন করছেন ফুল বিক্রেতারা। আর এ আয় দিয়ে ভালোভাবেই চলছে তাদের সংসার। এছাড়া এ বিলের পদ্ম ফুল ঢাকা, খুলনা, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা।
স্থানীয় বাসিন্দা আকাশ শেখ জানান , ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে এ বিলে পদ্মফুল ফুটতে দেখা যায় । প্রতি বছরই ফুলের সংখ্যা ও পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মতিয়ার শেখ জানান, প্রতিদিন দল বেঁধে অনেক মানুষ পদ্মফুল দেখার জন্য আসছেন পদ্ম বিলে । তারা নৌকা ভাড়া করে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন । স্থানীয়রাও ভ্রমণ পিপাসুদের সহিযোগিতা করছেন। বিভিন্ন পূজা-পার্বণে পদ্মফুলের ব্যবহার করেন হিন্দু ধর্মালম্বীরা । তাই এলাকার শ্রমজীবী মানুষ ফুল ও ফল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ঘুরতে আসা শিশু মেহেরুন বলেন,করোনায় দীর্ঘদিন ঘরের মধ্যে ছিলাম । স্কুল থাকায় তেমন একটা ঘুরতে যেতে পারি না। তাই ছুটির দিনে বিলে পদ্ম দেখতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, বর্ষা মৌসুমে এ বিলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া পদ্মফুল একদিকে যেমন বিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে তেমনি কাজ না থাকা লোকজন ফুল বিক্রি করে লাভবানও হচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ জেলার বিশিষ্টজনরা জানান, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধী । প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা এখানে আসেন । সেখান থেকে তারা পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চান ।
Leave a Reply