নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ : সজলা সুফলা শস্য-শ্যামলা আমাদের মাতৃভূমি সোনার বাংলাদেশ। আমাদের বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। আমাদের ফসলের মাঠে যেমনি পরিপূর্ণ থাকে বিভিন্ন ফসলে, তেমনি নদী ভরা থাকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর আকার বিবর্তন ও পানি সংকটে হারিয়ে যাচ্ছে এ ঐতিহ্য। এমনি সময় নদীতে মাছ চাষ করে সফলতা অর্জন করলেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার সরোয়ার হোসেন। কুমার নদীতে বাস ও জালের মাধ্যমে ভাসমান খাচা তৈরি করে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করে কয়েকবার সফল তিনি।
জানা যায়, স্বল্পপুজিঁ নিয়ে কিছু বাস ও জাল কিনে ৮টি ভাসমান খাচা তৈরি করেন সরোয়ার। পরে তেলাপিয়া মাছের পোনা কিনে চাষ শুরু করে। নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে কয়েক মাসেই মাছগেুলো বড় হয়ে ওঠে। সময়মত খাবার ও পরিচর্যার জন্যই মাছগুলো নদীর পরিবেশে বড় হতে থাকে। এসব মাছ অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে। খাঁচা স্থাপন ও ভাসিয়ে রাখার জন্য উপকরণ জিসেবে পাইপ,বাশ, লোহা অথবা প্লাস্টিকের ড্রাম, প্লাস্টিক রশি, মাটির চাক্কি অথবা সিমেন্টের তৈরি ব্লক এবং প্রয়োজনে প্লাস্টিকের ফ্লোট ব্যবহার করা হয়। মজুদ খাঁচায় পোনা চাষের জন্য পোনার ওজন কমপক্ষে গড়ে ২০-২৫ গ্রাম হওয়া প্রয়োজন। তবে গবেষণায় দেখা গেছে মজুদ খাঁচায় প্রতি ঘনিমটারে গওড় ৩০-৪০ গ্রাম আকারের তেলাপিয়া মাছের (গিফট অথবা মনোসেক্স) ৫০টি করে সুস্থ সবল আঙ্গুলি পোনা চার মাস চাষ করে ভাল ফল পাওয়া যায় । এ প্রেক্ষিতে ৩০-৪০ গ্রাম ওজেনর পোনা মজুদ করাই উত্তম।
এবিষয়ে সরোয়ার হোসেন জানান, আমি স্বল্পপুজি নিয়ে এ চাষাবাদ শুরু করি। মৎসবিদদের পরামর্শ অনুয়ায়ী পরিচর্যা করতে থাকি। আস্তে আস্তে মাছগুলো বড় হয়ে ওঠে। একটি মাছ ১-১.৫ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। আমি এ মাছ চাষাবাদ করে সফল হয়েছি। যেকেউ উপযুক্ত পরিবেশে নদীতে ভাসমান অবস্থায় মাছ চাষ করতে পারে। এতে বেকার সমস্যা অনেকটাই দুর করা সম্ভব।
নদীতে ভাসমান খাচায় চাষকৃত মাছ কিনতে আসাদুজ্জামান নামে এক ক্রেতা জানান, আমি কয়েকবার এ মাছ কিনেছি । এ মাছ খেতে অনেকটা সুস্বাদু । এলাকার অনেকেই ৫-২০ কেজি করে মাছ কিনে নিচ্ছে। শুধু চাকরির পিছনে না দৌড়ে এসব চাষাবাদের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সম্ভব। এতে বেকার সমস্যা দুর হয়। যা আমাদের দেশের জন্য অনেকটা লাভজনক।
সহিদুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা জানান, এ মাছ খেতে অনেক স্বাদ। বর্তমানে পুকুরে চাষকৃত মাছ খেতে তেমন স্বাদ নেই। তাছাড়া চাষের মাছ স্বাদ হয়না বলেই আমরা জানি। কিন্তু নদীতে ভাসমান খাচায় চাষকৃত মাছ অনেকটা স্বাদযুক্ত। তাই আমিসহ এলাকার অনেকেই প্রায় প্রতিদিনই এ মাছ কিনতে আসে।
মৎস অফিস সূত্রে জানা যায়, সারা বছর পানি থাকে এবং স্রোতের তীব্রতা কম থাকে এমন প্রবাহমান জলাশেয় জালের তরী খাঁচা ভাসমান অবস্থায় স্থাপন করে মাছ চাষ করাকে খাঁচায় মাছ চাষ বলে। প্রবাহমান উন্মুক্ত নদী-নালা ও জলাশেয় খাঁচা. মাছ চাষের মাধ্যমে দেশের সার্বিক মৎস উৎপাদন বৃদ্ধি হলে দেশের জনগেণর প্রাণিজ প্রোটিনের মামত্রা বৃদ্ধি পাবে । পাশাপাশি দেশর গরীব, বকার ও প্রান্তিক চাষীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ আয় বৃদ্ধির সুযোগ হবে এবং সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়ক ভূমিকা রাখবে ।
Leave a Reply