সন্ধান২৪ ডেস্ক: বাংলাদেশ একটি বদ্বীপ । বাংলার নদ-নদী এ দেশের ইতিহাস রচনা করেছে । নদীর তীরে গড়ে উঠেছে আমাদের সভ্যতা, ঘরবাড়ি, সংস্কৃতি । নদ-নদীর কারণেই বাংলাদেশ সুজলা, সুফলা ও শস্য শ্যামলা। পদ্মানদী বাংলাদেশের একটি বড় নদী । এ নদী পাড় হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকায় পারি দেয়। অনেক সময় এ নদী পারি দিতে গিয়ে হারাতে হয় জীবন ও বিভিন্ন মালামাল । তাছাড়া বন্যা দেখা দিলে পদ্মা নদীর দুই পাড়ে বসবাস করা অসংখ্য পরিবারের ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। জন-সাধারণ যাতে সহজেই রাজধানী ঢাকায় পৌছাতে পারে, সেজন্য অনেক দিনের স্বপ্ন পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু নির্মান করা। যে স্বপন্ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পদ্মানদীর উপর নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতু ।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলার মানুষের স্বপ্ন পদ্মা নদীর উপর নির্মিত পদ্মা সেতু। সেতুটির পুরো কাজ শেষ না হলেও ৬.১৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৫ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যেই। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনীতিতে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন।
জানা যায়, কয়েকবছর ধরে চলছে এ সেতু নির্মানের কাজ। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ সম্পাদনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান সরকার।
আগামী বছরের জুন মাসে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল । কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাস আর এবছরের ভয়াবহ বন্যায় এ সেতু নির্মাণকাজে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। তাই আগামী জুনে এটা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২২ সালের মধ্যেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এ দীর্ঘ সেতু দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে দেবে ।
সকল জল্পনা- কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে । এরই মধ্যে সেতুর পাঁচ কি.মি. দৃশ্যমান হয়েছে ।
ভয়াল মহামারি করোনা ভাইরাস ও বছরের বর্ষায় পদ্মা নদীর পানি তীব্র গতিতে বৃদ্ধি ও নদীতে তীব্র স্রোত থাকার কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে কিছুটা বিঘ্ন হওয়ায় পদ্মা সেতুর সবটুকু দৃশ্যমান হতে নির্ধারিত সময়ের থেকে কিছুটা সময় বেশি লাগবে ।
তবে এ আবহাওয়ার মধ্যেও নিয়মিত পদ্মা পাড়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে । সেতু নির্মাণের কাজ থেমে নেই । এরই মধ্যে মূল কাজের ৮০ শতাংশ পদ্মা সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেতু কর্তৃপক্ষ । বাকি কাজও দ্রুত গতিতে চলছে ।
পদ্মা সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে । দেশের প্রথম আন্তর্জাতিকমানের দৃষ্টিনন্দন ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কটি ইতিমধ্যেই আধুকায়নের ফলে দৃষ্টিনন্দনে রুপ নিয়েছে ।
১লা সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তর ঘুরে দেখা যায়, ঝড়-বৃষ্টি আর প্রবল স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রুত গতিতে কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, ইতিমধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের আয়তনেরেএই পদ্মা সেতুর পাঁচ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে । যা মূল সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি কাজও খুব দ্রুত গতিতে চলছে ।
করোনা ভাইরাস ও পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত না থাকলে ২০২১ সালের মাঝামাঝিতেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতো । কিন্তু করোনার কারণে সেতুর নির্মাণ কাজে কিছু বিলম্ব হয়েছে । একারণে ২০২২ সালের যে কোনো সময় সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবেও জানান একাধিক সূত্র ।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পদ্মাসেতুর সংযোগ সড়ক গুলো মিলিত হওয়া ভাঙ্গা আধুনিক গোলচত্বর ও উন্নত সড়ক নির্মিত হয় । ফলে এখন কোনো দুর্ভোগ ছাড়াই যাত্রীরা সহজেই যাতায়াত করতে পারছে মুহুর্তেই । নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়িগুলো কম সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছে ।
ভাঙ্গা গোলচত্বরের সঙ্গে ৪টি সড়কযুক্ত হয়েছে । প্রত্যেকটি সড়কে রয়েছে ৪টি করে লেন। পশ্চিম দিকের সড়কটি খুলনা-বাগেরহাট-যশোর হয়ে বেনাপোলের সঙ্গে মিশেছে। দক্ষিণ দিকের সড়কটি মাদারীপুর হয়ে চলে গেছে বরিশাল । উত্তর দিকের সড়কটি ফরিদপুর জেলা শহর হয়ে দৌলতদিয়া এবং ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । আর পূর্বদিকের সড়কটি পদ্মাসেতুর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পদ্মাসেতু চালু হলে সড়কটি মিলিত হবে ঢাকার সঙ্গে।
ভাঙ্গা গোলচত্বরের পার্শ্ববর্তী এলাকার সাব্বির চোকদার জানায়, দীর্ঘ বছর ধরে প্রত্যাশা ছিল এখানে আধুনিক গোল চত্বর ও আধুনিক মহাসড়ক নির্মাণ হোক । আমাদের সে প্রত্যাশা এখন পূর্ণ হয়েছে। আমরা সহজেই যেকোনো স্থানে যাতায়াত করতে পারছি । এছাড়া এখানের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
মূলত গোলচত্বরের সংযোগ সড়কগুলোর নির্দিষ্ট লেন ধরেই কোনো প্রকার যানযট ছাড়াই পরিবহনগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে । এই আধুনিকতার ছোঁয়া পাওয়ায় শুধু ভাঙ্গা নয়, এর আশপাশের জেলাগুলোর অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন হতে শুরু করেছে ।
Leave a Reply